বাংলাদেশে লাগাতার হিন্দু নির্যাতন, প্রতিবাদের আঁচে উত্তাল কলকাতা, বিক্ষোভে সামিল শুভেন্দু, দিলেন চরম সতর্কবার্তা

 বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভে শামিল হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।


বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভে শামিল হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রতিবেশী দেশে হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে খুনের ঘটনার পর এই বিক্ষোভ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ায়। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে  প্রায় ২,০০০ বিজেপি কর্মী-সমর্থক রাস্তায় বসে পড়ে ময়মনসিংহে ১৮ ডিসেম্বর রাতে দীপু দাসকে পিটিয়ে হত্যা এবং পরে দেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানান। বিক্ষোভকারীরা এই ঘটনাকে ‘নৃশংস ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দেন।


ঘটনা প্রসঙ্গে  শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “দীপু দাস হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলের কঠোরতম শাস্তি চাই। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার ও হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। যদি এই হামলা না থামে, তবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর ১০ হাজার মানুষ নিয়ে আবার বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভে ফিরব।”তিনি আরও জানান, “হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ২৪ ডিসেম্বর রাজ্যজুড়ে হিন্দু সংগঠনগুলি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাস্তা অবরোধ করবে।”বিক্ষোভ চলাকালীন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের কুশপুতুল দাহ করেন আন্দোলনকারীরা। গোটা এলাকায় মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। এদিন কিছু সময় আগেই পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির নেতারাও বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের সামনে পৃথকভাবে বিক্ষোভ দেখান। কংগ্রেস নেতৃত্ব বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হিংসা বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ জরুরি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দীপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ডের পর ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সেই অস্থিরতার আঁচ এবার কলকাতার রাজপথেও স্পষ্ট হয়ে উঠল।

এদিকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলির উপর লাগাতার হামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সোমবার ঢাকায় বিক্ষোভে শামিল হল বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠন। অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে  বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন,  হত্যা ও নির্যাতন রুখতে সরকার কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সংগঠনের নেতারা মানববন্ধন গড়ে তোলেন। তাঁরা ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে খুন করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান। গত বৃহস্পতিবার কর্মস্থল থেকে টেনে বের করে একদল দুষ্কৃতী তাঁকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে এবং পরে দেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে শ্রমিক, পড়ুয়া ও মানবাধিকার সংগঠনগুলির মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতও।

বিক্ষোভে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাইনরিটি ইউনিটি ফ্রন্টের যুগ্ম সমন্বয়ক মণীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, “মহম্মদ ইউনুস দাবি করেন তিনি একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়বেন, কিন্তু বাস্তবে তিনি এক অমানবিক প্রধান উপদেষ্টা।”
উল্লেখ্য, গত বছর আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ধারাবাহিক হামলার অভিযোগ উঠছে। দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) প্রথমে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশ আরও দু’জনকে আটক করে। পুলিশ সদর দফতরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।

এছাড়াও ঢাকায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের দফতর, পাশাপাশি ছায়ানট ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উপর হামলার ঘটনায় নয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ ও সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে মোট ৩১ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ভারতীয় দূতাবাসের বাইরে অশান্তির ঘটনায় আরও তিনজন জড়িত বলে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের হিংসার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এই ঘটনায় জড়িত কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না। ডিসেম্বরের ১২ তারিখে ডানপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি লাগার পর তাঁর মৃত্যু হলে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন।

এদিকে সোমবার দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের খুলনা শহরে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের আরেক নেতা মোতালেব শিকদারকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে লাগাতার হিংসার ঘটনার প্রেক্ষিপ্তে 
বিএনপি জাতীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “যাঁরা সত্যিই একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চান, তাঁরা আর চুপ থাকতে পারেন না। হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসেছে।”

Post a Comment

Previous Post Next Post